প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর অবস্থা গুরুতর দিকে যাওয়া ফেরাতে পারে এমন ওষুধ খুব অল্পই রয়েছে। মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি এমনই একটি ওষুধ।
মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি গবেষণাগারে তৈরি এক প্রকার প্রোটিন যা ক্ষতিকর ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দ্রুত সময়ে নিলে করোনা আক্রান্ত রোগীর হাসপাতালে যাওয়ার ঝুঁকি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে এই ওষুধ।
তবে দেখা যাচ্ছে, যাদের এই ওষুধ সবচেয়ে বেশি দরকার তাদের কাছেই এ সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছানো হচ্ছে না।
গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের এলি লিলি ফার্মাসিউটিক্যালসের মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ‘ব্যামল্যানিভিম্যাব’ এর অনুমোদন দিয়েছে খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। এর দু’ সপ্তাহ পরেই জরুরি ব্যবহারের জন্য রেজেনেরনের মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ককটেলের অনুমোদন দেয় এফডিএ। দুটি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি- ক্যাসিরিভিম্যাব ও ইমডেভিম্যাবের সমন্বয়ে তৈরি এ ওষুধটির নাম রেজেন-কোভ২। প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্প যখন করোনায় আক্রান্ত হন তখন তাকে এই ওষুধটি দেয়া হয়েছিল।
এফডিএ’র মতে, কোনো ব্যক্তির মধ্যে যদি করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলো দেখা দেয় এবং পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব মনোক্লোনাল আন্টিবডি প্রয়োগ করতে হবে। এর সরবরাহ খুবই সীমিত হওয়ার কারণে শুধুমাত্র অধিক ঝুঁকিসম্পন্ন রোগী- যেমন ৬৫ বয়স্কের উর্ধ্ব ব্যক্তি বা যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো জটিল রোগ আছে তাদের ওপরেই এটি প্রয়োগের অনুমতি রয়েছে।
এফডিএ’র কমিশনার ডাক্তার স্টিফেন হান বলেন, ‘আমরা যে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিগুলোর অনুমোদন দিয়েছি, সেগুলো প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হওয়া রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি ঠেকাতে দারুণ সফলতা দেখিয়েছে। গত মাসে অনুমতি দেয়ার পর এগুলো সারা দেশে বিতরণ করা হয়েছে। তাই স্থানীয়ভাবে এগুলো পাওয়া যাবে। তবে এগুলো সরকারি আইনের আওতাধীন।’
যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে বিছানার সংকটের কারণে করোনায় আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের জায়গা দেয়া যাচ্ছে না। এমন এক পরিস্থিতিতে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু তারপরও কেন আরও বেশি সংখ্যক রোগীদের এই ওষুধ দেয়া হচ্ছে না?
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও মানব সেবার সভাপতি অ্যালেক্স আজার বলেন, ‘এই ওষুধগুলো আমাদের ব্যবহার করতে হবে। যেসব রোগী করোনা পজিটিভ ও যাদেরকে হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি রয়েছে তাদেরকে এই ওষুধ দিতে হবে। এগুলো আমাদের দ্রুত পেতে হবে যেন মানুষদের আমরা হাসপাতালে আসা থেকে বিরত রাখতে পারি।’
কীভাবে কাজ করে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি?
জন্স হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির জ্যেষ্ঠ স্কলার জিজি কুইক গ্রনভল বলেন, ‘আমাদের শরীরে যখন কোনো জীবাণুর সংক্রমণ হয় তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিভিন্ন রকম অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই অ্যান্টিবডিগুলো আক্রমণকারী জীবাণুগুলোর সঙ্গে লড়াই করে।’
তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী অ্যান্টিবডিগুলো জীবাণুর সঙ্গে লেগে থাকে- যেমন এক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের সঙ্গে লেগে থাকে এবং ভাইরাসগুলোকে কোষে আক্রমণ করা থেকে প্রতিরোধ করে। তাই ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যান্টিবডির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’
‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি কোনো নির্দিষ্ট ধরণের অ্যান্টিবডিকে বাছাই করে সেটিকে ‘নিউট্রালাইজ’ করে এবং অ্যান্টিবডিটির একটি বিশুদ্ধ সংস্করণ তৈরি করে যা ওষুধ হিসেবে কাজ করে’, বলেন গ্রনভল।
সিএনএন’র প্রতিবেদন অবলম্বনে